মো: বিল্লাল হোসেন: পিতৃপরিচয় ও ওয়ারিশান থেকে বঞ্চিত হওয়ার উপক্রম হয়েছে দেশের হাজারও মানুষের। নিজের নাম, পিতা-মাতার নাম এমন কী ভুল ঠিকানার জন্য এই পরিস্থতির সৃষ্টি হয়েছে।
শোষণ ও কালাকানুন থেকে মুক্তির জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর নেতৃত্বে দীর্ঘ লড়াই সংগ্রাম ৩০লক্ষ শহিদ ও ২লক্ষ মা-বোনের ইজ্জত এর বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর জন্ম গ্রহণ করে বাংলাদেশ। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বর্রবর্তায় পিতৃহীন সকল সন্তান এর পিতার নাম শেখ মুজিবুর রহমান লিখতে অনুমতি দেন জাতির জনক।
অনেক চড়াই-উৎরাই পার করে ৫১ বছর পূর্ণ করলো স্বাধীন বাংলাদেশ। প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির দোলা চলে ঝড়ে গেল অসংখ্য মানুষ। ৫১বছর পরও আমরা কালাকানুন থেকে মুক্তির পথ পাচ্ছি না। এই কালাকানুন বাংলাদেশের মানুষের রক্ত শোষণ করে চলছে। জাতির জনক কে নিশ্চিহ্ন করার পর কালাকানুন গুলো আইনে পরিণত হয়ে গেছ।
৫১ বছর পর আমরা জ্ঞান বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির সুফল ভোগ করছি। প্রযুক্তির চরম উন্নয়ন হয়েছে। অনেক সুবিধা ভোগ করছি। জনগণের টাকায় এই প্রযুক্তির উন্নয়ন করছে সরকার, কাজ করবে জনকল্যাণে। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য NID (জাতীয় পরিচয় পত্র) কতৃপক্ষ এদেশের হাজার হাজার বৈধ সন্তান কে অবৈধ হিসাবে উপস্থাপন করছে তাদের অথবা তাদের দ্বারা নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভুলে। বঞ্চিত করছে পিতৃ ও মাতৃ পরিচয় থেকে। বঞ্চিত করছে পিতা-মাতার ওয়ারিশ থেকে। বঞ্চিত করছে রাষ্ট্রের সকল সুযোগ সুবিধা থেকে ।
প্রযুক্তির ব্যবহারে এ কেমন বিড়ম্বনার সৃষ্টি হলো। বাংলাদেশ সরকার ২০০৬-২০০৭সালে প্রথম ভোটার তালিকা সঠিক ভাবে প্রণয়ন করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। তখন ছবি সহ ভোটার তালিকা প্রনয়ণ করেন। ছবি সহ ভোটার তালিকা প্রনয়ণ করতে গিয়ে অদক্ষ কর্মচারী ও তাদের গাফিলতির জন্য অসংখ্য ভুলে পরিপূর্ণ ছিল ভোটার তালিকা। উদ্দেশ্য ছিল ভোটার সঠিক কি না তা যাচাই করা। তালিকা প্রনয়ণ কারির গুরুত্ব হীনতা এবং জনগণের অসাবধানতার জন্য অসংখ্য ভুলে পরিপূর্ণ নামের বানান ও বয়সে ।
অনেক সময় মূল নাম বাদ দিয়ে ডাক নাম দিয়ে ও ঐ তালিকা তৈরি করেন। লিখতে গিয়ে ও অসংখ্য ভুল করে এবং কম্পিউটার টাইপ করতে গিয়েও হাজরও ভুল করেন। যেমন একটা পরিবারের সমস্যার কথা বলছি- ব্যাক্তির নাম আবুল কাশেম তার সব ঠিক আছে। ছেলের নাম মজিবুর। পিতার নাম লিখে রেখেছে আবুল কাশেমের স্থলে আবুল কালাম।
আবার এমন ও আছে একজন ব্যাক্তির দুটি নাম থাকে। মুল নাম এবং ডাক নাম। মুল নাম বাদ দিয়ে ডাক নাম লিখে ছবি সহ ভোটার তালিকা তৈরি করেছে। সুষ্ঠ নির্বাচনের জন্য এই তালিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে । কিন্তু যখন এই ভুলে ভরা ভোটার তালিকা কে জাতীয় পরিচয় পত্র হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে তখনি হাজার হাজার মানুষ আইনের দৃষ্টিতে পিতৃহীন ও মাতৃহীন হয়ে পরেছেন,হচ্ছেন বেওয়ারীশ। পিতা -মাতার জাতীয় পরিচয় পত্র হতে বিন্দু মাত্র পার্থক্য হলে সন্তানের চাকরি, সরকারি সুযোগ সুবিধা, পৈতৃক সম্পত্তির ওয়ারিশ থেকেও বঞ্চিত করছে রাষ্ট্র। রাষ্ট্রের যেকোনো দপ্তরে যাওয়া হউক এই ভুলের জন্য জনগণকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সকল সুযোগ সুবিধা হতে বঞ্চিত করা হচ্ছে পাশাপাশি এই দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে চলছে ঘুষের জমজমাট ব্যবসা। শোষণ করে নিচ্ছে সাধারণ মানুষের রক্ত ।
এই বিব্রতকর পরিস্থিতির জন্য কি সাধারণ জনগণ দায়ী না রাষ্ট্রযন্ত্র দায়ী। যে ভুল করেছে রাষ্ট্রের অদক্ষ ও কাণ্ডজ্ঞানহীন কর্মচারি তার খেসারত দিতে হচ্ছে জনগণকে । এই সব ভুল সংশোধনের জন্য সাধারণ মানুষ NID কতৃপক্ষের দাঁড়ে দাঁড়ে ছুটে চলছে। অনেক ভুক্তভোগী আছেন যারা তিন চার বছর বা তার-ও বেশি সময় নিয়ে ছুটাছুটি করছে। এর মধ্যে অনেকেই পৈত্রিক সম্পত্তি অধিকার হতে বঞ্চিত হচ্ছেন। আবার অনেকে জমি বিক্রি করে রেজিষ্ট্রেশন করে দিতে পারছেন না। প্রয়োজনের সময় জমি বিক্রি করতে পারছেন না। অনেকে আবার পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যাচ্ছে বিনা চিকিৎসায়, অর্ধাহারে বা অনাহারে। এই ভাবে চলতে থাকলে এক সময় মানুষ জমি ভোগদখল করবে ঠিকই কিন্তু আইনের দৃষ্টিতে মালিকানা হীন হয়ে পরবে। এই সমস্যার সমাধানে পদক্ষেপ গ্রহণ করা রাষ্ট্রের এখনি উপযুক্ত সময়।
লেখক মো: বিল্লাল হোসেন
সহকারি শিক্ষক
ডৌহাখোলা উচ্চ বিদ্যালয়
গৌরীপুর,ময়মনসিংহ।