মুনাফা নয়, মানুষ: তরুণেরর বর্তমান ও ভবিষ্যতের জলবায়ুর রক্ষায় লড়াই”বাংলাদেশী তরুণরা সরকার এবং বিনিয়োগকারীদের প্রকৃতি ও পরিবেশ বিধ্বংশী কার্যক্রম, ক্ষতিকর জীবাশ্ম জ্বালানী ব্যবহারের জন্য দায়বদ্ধ করে এবং তা থেকে সরে এসে নবায়নযোগ্য জ্বালানী প্রসারের আহবান জানায়।
আজ ২৫ মার্চ ( শুক্রবার) ২০২২, ময়মনসিংহে বৈশ্বিক ক্লাইমেট স্ট্রাইক পালনের অংশ হিসেবে ময়মনসিংহ গাঙিনাপাড় ট্র্যাফিল মোড়ে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশ ও মানববন্ধন থেকে এ আহবান জানানো হয়।
জলবায়ু সুরক্ষায় কাজ করা সংগঠন “ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস” এর উদ্যোগে এক গ্লোবাল ক্লাইমেট স্ট্রাইকের আয়োজন করা হয়। এতে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দায়িত্বরত এক পুলিশ কর্মকর্তা দেশব্যাপী তরুণরা সমালোচনামূলক স্টেকহোল্ডারদের মাতারবাড়ি কয়লা পাওয়ার প্ল্যান্ট ফেজ 2 বন্ধ করার আহ্বান জানায়। তারা ব্যয়বহুল জীবাশ্ম জ্বালানি আমদানির প্রতিক্রিয়া তুলে ধরে যা বাংলাদেশের জন্য একটি অধিক আর্থিক বোঝা এবং, নতুন বিদ্যুৎ খাতের মাস্টার প্ল্যানে নবায়নযোগ্য শক্তির অংশ বৃদ্ধির গুরুত্ব তুলে ধরে যা অবশ্যই জাস্ট ট্রানজিশনে সহায়তা করবে।

তারা জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য ন্যায়বিচার দাবি করে এবং উন্নত দেশগুলিকে জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলিকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য একটি দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য পথ নকশা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অভিযোজন কর্মের জন্য তহবিল সরবরাহ করার আহ্বান জানায়। বৈশ্বিক কার্বন নির্গমন হ্রাস ও ঐতিহাসিকভাবে দায়ী রাষ্ট্রগুলোর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের দাবিতে বৈশ্বিক পর্যায়ে স্কুল শিক্ষার্থীদের পরিচালিত আন্দোলন ‘ফ্রাইডেস ফর ফিউচার’ এবং ইয়ুথ নেট জাস্টিসের উদ্যোগে তরুণরা ফ্রাইডেস ফর ফিউচার সহ ময়মনসিংহের অন্যান্য সামাজিক সংগঠনগুলো এবং পরিবেশবাদী সংগঠনসমূহ ইয়াসিড, প্রত্যাশা, ভিবিডি, সহ আরো বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনগুলো বৈশ্বিক জলবায়ু ধর্মঘটের ডাকে একাত্মতা প্রকাশ করে এবং বিশ্বের এক হাজারেরও বেশি জায়গায় তরুণরা রাজপথে ও অনলাইনে যে ধর্মঘট পালন করছে, তার সঙ্গে সংহতি জানায়।
এ বছর দেশের যে ২৫ টি জেলায় একযোগে বৈশ্বিক জলবায়ু ধর্মঘট পালন করা হয়েছে, সেগুলো হলো: ঢাকা, গোপালগঞ্জ, শরিয়তপুর, মাদারীপুর, টাঙ্গাইল, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী, বান্দরবান, বরিশাল, ঝালকাঠি, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, খুলনা, সাতক্ষীরা, যশোর, বাগেরহাট, নড়াইল, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, গাইবান্ধা। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণরা কালো পোষাকে জীবাশ্ম জ্বালানীর ক্ষতিকর প্রভাব, ব্যানার- ফেস্টুন-প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে মানববন্ধন, পদযাত্রা ও নাটকের মধ্য দিয়ে জলবায়ু সংকটকে তুলে ধরে।

তরুনদের এ কাজে সহযোগিতা করে তাদের অভিভাবক ও এলাকার লোকজন। ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের ময়মনসিংহ জেলার সমন্বয়কারী অপূর্ব চন্দ্র সরকার বলেন, “বিদেশী কয়লা অর্থায়ন বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরেও, জাপান মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের ফেজ ২ অর্থায়নের কথা বিবেচনা করছে। তাদের উচিত কয়লা অর্থায়ন বন্ধ করা এবং তাদের প্রতিশ্রুতি রাখা। আমরা কয়লা বা অন্যান্য জীবাশ্ম জ্বালানি নয়, বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য শক্তির অংশ বাড়ানোর দাবি জানাই।“ “আমরা সহানুভূতি বা ক্ষতিপূরণের পরিবর্তে ন্যায়বিচার এবং দায়িত্ববোধের দাবি করি। জলবায়ু কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করা, অভিযোজন বা সহনশীলতা বৃদ্ধি কঠিন মনে হতে পারে, তবে এটি অত্যাবশ্যক,” তিনি আরও বলেন।
তরুণরা আরও ও বলেন, কার্বন নিঃসরণ কমাতে জীবাশ্ম জ্বালানি-নির্ভর বিদ্যুতে বিশ্বের উন্নত দেশ এবং বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিনিয়োগ বন্ধ করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন রোধে এসব দেশ ও প্রতিষ্ঠান বহুদিন ধরেই কার্বন নিঃসরণ কমানোর মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে। জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, জেনারেল ইলেকট্রনিক্স, সুমিটোমো করপোরেশন, জাইকা, এইচএসবিসি ব্যাংক এর মধ্যে অন্যতম বিনিয়গকারী। ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস এদের জলবায়ু দূষণে একটি বৈশ্বিক সংঘ বলে উল্লেখ করছে।