অগ্নিদগ্ধ রেখা আক্তারও অবশেষে স্বামী সন্তানের সঙ্গী হলেন
আগুনে পুড়ে স্বামী,তিন সন্তান ও স্ত্রীর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে নিমিষেই নিশ্চিন্ন হয়ে গেল একটি পরিবার। আগুন যে কত ভয়াবহ হতে পারে তা প্রত্যক্ষ করল আশুগঞ্জবাসী। স্বামী ও তিন সন্তানের পর গতকাল সোমবার রাত ঢাকায় শেখ হাসিনা বার্ন হসপিটালে রেখা আক্তারের মৃত্যুবরণের মাধ্যমে পরিবারটি নিশ্চিন্ন হয়ে গেল।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ বন্দরের ২২ ফেব্রুয়ারি রাতে মশার কয়েল জ্বালাতে গিয়ে দুর্ঘটনার সুত্রপাত হয়। শুনা যায় রান্না ঘরের গ্যাস লাইনটি আগে থেকেই ক্রূটিপুর্ণ ছিল।
ঘটনার দিন রাতে ১১ বছর বয়সী শিশু আরিফ হোসেন মশার কয়েল ধরাতে দিয়াশলাই জ্বালাতেই মুহূর্তে পুরো বাসায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে । ঘটনাস্থলেই অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যায় আরিফের ছোট ভাই জোবায়ের হোসেন (৭)। অগ্নিদগ্ধ আরিফ,তার বাবা মকবুল মিয়া (৪২) ও মা রেখা আক্তারকে মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন ঢাকা মেডিকেলেই মারা যান মকবুল হোসেন। একই দিনে আগুনে সারা শরীর ঝলসে যাওয়া ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা মুকবুলের স্ত্রী হাসপাতালেই একটি মৃত কন্যা সন্তান প্রসব করেন। তার দুইদিন পর মারা যায় আরিফ হোসেন। একে একে স্বামী তিন সন্তান হারিয়ে অবশেষে গতকাল রেখা আক্তারও সঙ্গী হন না ফেরার দেশের যাত্রী তাঁর স্বামী ও সন্তানদের। এভাবেই নিশ্চন্ন হয়ে গেলো পুরো একটি পরিবার।
মুকবুল,তার স্ত্রী ও সন্তান ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার খবর পেয়ে আমি ছুটে গিয়েছিলাম হাসপাতালে। আগুনে সারা শরীর ঝলসে যাওয়া স্বামী,সন্তান,স্ত্রীর মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরানোর যে দৃশ্য সেদিন দেখেছি এক কথায় তা ছিল অত্যন্ত বিভৎস ও অবর্ণনীয়। মুকবুল হাসপাতালে কয়েক ঘন্টা বেঁচে ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর অনেক কষ্ট করে তার সন্তান ও স্ত্রীর জন্য ঢাকা মেডিকেলে আইসিইউ’র ব্যবস্থা করা হলেও শেষ পর্যন্ত তাদেরকে বাঁচানো যায়নি। আসলে তারা যেভাবে ঝলসে গিয়েছিল বাঁচার সম্ভাবনাও খুব ক্ষীণ ছিল। তবু ডাক্তাররা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তাদের চেষ্টা চালিয়ে গেছেন।
সাবেক ছাত্রনেতা মুকবুল অত্যন্ত ভালো একজন মানুষ ছিলেন। সে অত্যন্ত সহজ সরল, সদালাপি ও বিনয়ী ছিল। আমাদের সকলের প্রিয়ভাজন মুকবুলের স্বপরিবারে এভাবে চলে যাওয়াকে আমরা কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছি না। তাঁর এই অকাল মৃত্যুতে সকল আশুগঞ্জবাসী আজ শোকে কাতর । মুকবুল ও তাঁর স্ত্রী সন্তানদের বিদেহী আত্বার শান্তি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।
লেখক:
অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু
সাধারণ সম্পাদক স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের, কেন্দ্রীিয় কমিটি,
সাবেক সহ-সভাপতি ও সিনিয়র যুগ্ম – সম্পাদক
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, জাতীয় কার্যকরী সংসদ।
গ/আ