পবিত্র প্রেমের বন্ধনে লাইলী-মজনু যেমন মানুষের হৃদয়ে প্রেমের উপাখ্যান হয়ে রয়েছেন শ্রদ্ধার আসনে,তেমনি সোহেল মিয়া ও রওশন আক্তারের ভালোবাসাও পবিত্র এক বন্ধন।
অন্ধ ভালোবাসার টানে সোহেল মিয়া তাঁর সুখের জীবন বিষর্জণ দিয়ে বিয়ে করেছেন জন্ম পঙ্গু রওশন আক্তারকে।ভালোবাসা এমনই এক পবিত্র আবেগ যে মানে না কোনো যুক্তি,মানে না কোনো শাসন-বারণ, বিধি-নিষেধ, করে না কোন হিসাব-নিকাশ।এক সাগর দুঃখকে জয় করে কন্টকাকীর্ণ বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে বার বার ছুটে যেতে মন চায় মনের মানুষে কাছে। এমনই ভালোবাসার টানে এক অজানা ভবিষ্যৎকে হাসিমুখে মেনে নিয়েছিলেন রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সোহেল মিয়া।
পরিবার পরিজন, সমাজের তোয়াক্কা না করে সবার অমতে পালিয়ে বিয়ে করেছেন ময়মনসিংহের ত্রিশালের রওশন আক্তারকে।
জন্ম থেকেই অচল দুই পা নিয়েই বেড়ে উঠা রওশনের। চলাচল ও কাজকর্ম করতে হয় হাতে ভর দিয়ে।চলাচলে অক্ষম নিরানন্দ এমন জীবন নিয়ে কারো জীবনসঙ্গী হওয়া ছিল অনেকটাই দুষ্প্রাপ্য।অবহেলা আর লোক চক্ষুর অন্তরালে স্বপ্নহীন জীবন নিয়ে বেড়ে ওঠা রওশন আক্তারের। তবে যখন খেকে মুটোফোনে সোহেল মিয়ার সাথে পরিচয় হয়, কথা হয়,তখন থেকে রওশন আক্তারের পরিচয় হয় এক নতুন পৃথিবীর তাঁর ভালোবাসা তাকে স্বপ্ন দেখায় নতুন করে বাঁচার। মোবাইলে হয়েছিল দু’জনের পরিচয় তারপর প্রেম। এরপর রওশনের ভালোবাসার টানে সব ছেড়ে সারা জীবনের সঙ্গী হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করা সোহেলের। ভালো চাকরি করতেন সোহেল,মাস শেষে ভালো মাইনেও পেতেন। সেই স্বচ্ছলতার জীবন ছেড়ে অভাবের সংসার মেনে নিয়েছেন অসহায় স্ত্রীর পাশে থাকতে। নিজের পিঠে চড়িয়ে স্ত্রীকে নিয়ে যাওয়া-আসা করেন এখানে-সেখানে। ময়মনসিংহের ত্রিশালের গুজিয়াম এলাকায় মাটির ঘর আর একটি টং দোকানই সম্বল এ দম্পতির। শত কষ্টের মাঝেও তাদের ভালোবাসা আর পরস্পর আস্থা-বিশ্বাসেই সুখ খোঁজেন তারা।
কী ভবে পরিচয় হয় জানতে চাইল সোহেল মিয়া বলেন, পড়াশোনা শেষ করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে উচ্চ পদে চাকরি করতাম। একদিন বিকেলে অফিস ছুটির পর আমার টেবিলের ড্রয়ারে থাকা ১০ টাকার নোটে একটি নাম্বার লেখা দেখতে পাই। ওই নাম্বারে একদিন কল করি। সেই কলের মাধ্যমেই রওশনের সঙ্গে আমার প্রথম কথা হয়,পচিয়ও হয়। ধীরে ধীরে প্রেমে জড়িয়ে পড়ি। ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে প্রেমের শুরুটা হলেও প্রায় এক বছর পর ডিসেম্বরে গিয়ে বিয়ে করি আমরা।
রওশন আক্তার বলেন, আমি প্রতিবন্ধী হওয়ায় আমার পরিবার থেকেও বিয়েতে সম্মতি ছিল না। সে সময় সবাই বলাবলি করছিল, বিয়ের পর আমাকে ছেড়ে চলে যাবে সোহেল। কিন্তু আমার আত্মবিশ্বাস ছিল তাঁর উপর, যাকে আমি ভালোবাসি সেও আমাকে ভালোবাসে।এই বিশ্বাসটাই আমি সোহেলের ওপর করতে পেরেছিলাম। সেজন্য সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে বিয়ে করি।১৫ বছরের বিবাহীত জীবনে আমাদের একটি মেয়ে সন্তান আছে। মেয়ে হওয়ার পর আমাদের ভালোবাসা যেন আরও বেড়েছে।