ময়মনসিংহে জোড়া খুনে জড়িতদের ফাঁসির দাবীতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে এলাকার সাধারণ মানুষ ও পরিবার। ময়মনসিংহ সদর উপজেলার সিরতা নয়াপাড়ায় মসজিদ ও মাদরাসার জমি নিযে বিরোধের জেরে সহোদর দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় প্রকৃত খুনিদের দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে এলাকাবাসী।
আজ শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারী ২০২২) তারিখ সকালে সিরতা নয়াপাড়ায় এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
এর আগে এই ঘটনার বিচারের দাবিতে গত ২০২১ সালের ২৮ ডিসেম্বর মঙ্গলবার সকালে উক্ত ঘটনায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়ে ছিল। গত ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর শুক্রবার দিন-দুপুরে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার সিরতা ইউনিয়নের সিরতা নয়াপাড়া গ্রামে এ হত্যা কান্ডের ঘটনা ঘটে।
এ হত্যা কান্ডে নিহত সহোদর দুই ভাই হলেন রফিকুল ইসলাম (৩৫) ও শফিকুল ইসলাম (২৬)। মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সিরতা নয়াপাড়া গ্রামের মসজিদ ও মাদরাসার জমি নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে নয়াপাড়া’র আবুল হাসেমের সঙ্গে গ্রামবাসীর এক অংশের বিরোধ চলে আসছিল। বিরোধপূর্ণ জমি নিয়ে এর আগেও কয়েক দফা জগড়া ও মারামারি ও হয়ে ছিল।
হত্যাকান্ডের দিন মসজিদ ও মাদরাসার জমি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সালিশ হওয়ার কথা ছিল। সালিশ শুরু হওয়ার আগেই নয়াপাড়ার বুলবুল ও সিরতা ভাইট্টা পাড়ার তালেব গং ছাড়াও আবুল হাসেমের লোকজন এসে নয়াপাড়া ছালুর মোড়ে রফিকুলের দোকানে ঢুকে রফিকুলকে লাঠিসুঠা দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। রফিকুলকে বাঁচাতে এগিয়ে যান তাঁর ছোট ভাই শফিকুল। পরে শফিকুলকেও মারধর করা হয়।
পরে এলাকাবাসীর সহযোগীতায় তাদেরকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠালে পথিমধ্যেই মারা যায় রফিকুল ইসলাম। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান শফিকুল ইসলাম।
এ ঘটনায় নিহত দুই ভাইয়ের বাবা মোঃ আলী আকবর বাদী হয়ে কোতোয়ালী মডেল থানায় মামলা করেন। মামলায় প্রধান আসামী সিরতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু সাঈদসহ মোট ৩৬ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ৭ থেকে ৮ জনকে আসামী করা হয়। ইতিমধ্যে এ ঘটনায় জড়িত ৭ জন আসামীকে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করে কোতোয়ালী মডেল থানা পুলিশ। বাকি আসামীদের মধ্যে ১১ জন আসামী হাজিরা দিতে আসলে আদালত তাদেরকে হাজিরা না দিয়ে জেল-হাজতে প্রেরণ করে।
মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলে বক্তব্য রাখেন, সিরতা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সাইফুদ্দিন আহমেদ বকুল, ময়মনসিংহ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মোশারফ হোসেন, ৫নং সিরতা ইউনিয়নের কৃষকলীগের সভাপতি মোঃ আব্দুল মজিত, মোখলেছুর রহমান সরকার, আব্দুল সালাম (সালু), তৈয়ব আলী, মাওঃ নুরুল ইসলাম নূরী, হোসেন আল বীর, শহিদুল ইসলাম শহিদ প্রমূখ।
মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলে বক্তাগণ বক্তব্যে বলেন, দ্রুত সকল আসামীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনাসহ নিহত দুই ভাই এর অসহায় পরিবারের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এ ছাড়াও আসামীদের পক্ষ হতে একের পর এক মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা দিয়ে বাদী পক্ষকে হয়রানিসহ বিভিন্ন ধরনের হুমকি প্রদর্শন করা হচ্ছে। বক্তাগণ আরও বলেন, চেয়ারম্যান সাঈদসহ তাঁর দলবল নিয়ে এ হত্যা কান্ডের নিহত দুই ভাই এর পরিবার যেন সঠিক বিচার না পায় এর জন্য বিভিন্ন মামলা দিয়ে বাদী পক্ষকে নির্মূল করার জন্য পায়তারা করছে।
নিহত দুই ভাই এর বাবা আলী আকবর কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট আকুল আবেদন আমার দুই ছেলে হত্যার সঠিক বিচার চাই। নিহত রফিকুল এর ছেলে আবুল হোসেনও দাদার মতো একই কথা বলেন। এ ছাড়াও নিহত সহোদর দুই ভাই রফিকুল ও শফিকুল এর মা, রাশিদা খাতুন ও স্ত্রী সন্তানসহ হাজারো লোকজন মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলে অংশ গ্রহণ করে খুনের সাথে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবী জানান।
গ/আ