Logo
রবিবার, ০৩ অগাস্ট ২০২৫, ০৩:৫৫ অপরাহ্ন
বিজ্ঞপ্তি :
অনলাইন নিউজ পোর্টাল গনরাজ24- ইতিমধ্যে পাঠক সমাজে ব্যাপকভাবে সমাদৃত, বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে প্রতিষ্ঠানটিতে কাজ করছে তরুণ, অভিজ্ঞ ও নির্ভিক সংবাদকর্মীরা।  এই তালিকায় আপনাকেও যোগ হবার সুযোগ দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি । শিক্ষাগত যোগ্যতা: কমপক্ষে স্নাতক/সমমান। অভিজ্ঞদের শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিলযোগ্য । অভিজ্ঞতাঃ গণমাধ্যমে নূন্যতম ১/২ বছরের কাজের বাস্তব অভিজ্ঞতা থাকতে হবে । মোবাইল- 01784-262101, ই-মেইল- gonoraj24@gmail.com
শিরোনাম :
ময়মনসিংহের চর ঈশ্বরদীয়া ইউনিয়ন পরিষদে টিসিবি‘র পণ্য বিতরণে অনিয়ম পুলিশ প্রশাসনের নিস্ক্রিয়তায় দুর্ধর্ষ চোরি,ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটছে খালেদা জিয়ার সুস্থ্যতা ও তারেক রহমানের দীর্ঘায়ু কামনায় দোয়া ও ইফতার মাহফিল নবগঠিত শম্ভুগঞ্জ প্রেসক্লাবের আয়োজনে দোয়া ও ইফতার মাহফিল শম্ভুগঞ্জ ঔষধ ব্যবসায়ী সমিতির আয়োজনে দোয়া ও ইফতার মাহফিল গৌরীপুর মহিলা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষা সফর ৪১ সদস্য বিশিষ্টি চর নিলক্ষীয়া ইউনিয়ন কৃষক দলের আহ্বায়ক কমিটি গঠন ফুলপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগীতা, সাংস্কৃতিক ও পুরুষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে শম্ভুগঞ্জ প্রেসক্লাবের পুষ্পস্তবক অর্পণ ঐতিহ্যবাহী গৌরীপুর মহিলা কলেজে নবাগত অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের যোগদান

বাংলাভাষা ও সংস্কৃতির বিশ্বায়ন

গণরাজ ডেক্স
  • আপডেটের তারিখ : সোমবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২২
  • সময় 3 years আগে
  • ২২৮ বার পড়া হয়েছে
শাহীন চৌধুরী ডলি

বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। একুশে ফেব্রুয়ারি তারিখটি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’। বাঙালি হিসেবে নিজেদের ভাষার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিতে আমরা গর্বিত। জোর করে চাপিয়ে দেওয়া ভাষার বিরুদ্ধে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে মায়ের ভাষা, মুখের ভাষা আমাদের প্রিয় বাংলা ভাষার স্বীকৃতি পাই। সেই আন্দোলনকে শ্রদ্ধা জানিয়ে আসে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। ১৯৯৯ সালের নভেম্বর মাসে ইউনেস্কো একুশে ফেব্রুয়ারি দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করলে ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে সকল দেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিনটি পালিত হয়ে আসছে।

আমাদের ভাষাদিবস ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে দুজন প্রবাসী বাংলাদেশির উদ্যোগে। ১৯৯৮ সালে কানাডাপ্রবাসী রফিকুল ইসলাম ও আবদুস সালাম প্রাথমিক উদ্যোক্তা হিসেবে দিনকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার আবেদন জানিয়েছিলেন তৎকালীন জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানের কাছে। এরই ফলে বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতায় ২০১০ সালের ২১ অক্টোবর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনে এই প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে পাস হয়েছে। অমর একুশ এখন গর্ব ভরে স্মরণ করে সারা বিশ্ববাসী।

স্বভাবতই বাঙালি হয়ে মনের মধ্যে বাংলা ভাষার জন্য ভালোবাসা সবসময়ই থাকে। ২১ ফেব্রুয়ারিতে অন্যরকম একটা আবেগ সৃষ্টি হয়। তবে দেশে-বিদেশে সকল বাঙালিকে সকল সময় মনে প্রাণে মায়ের ভাষা বাংলাকে ধারণ করতে হবে এবং প্রয়োগে সাবলীল হতে হবে। যুগের চাহিদা অনুযায়ী ইংরেজি চর্চা বাদ দেওয়া একেবারেই অসম্ভব। ইংরেজি ভাষা বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে সভ্যতা অগ্রগতির প্রধান ভাষা। এ সময়ে ইংরেজি ভাষাচর্চা থেকে বিচ্যুত হওয়া মানে নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি করা। কিন্তু তাই বলে বিশ্বসভ্যতার অগ্রগতির ভাষাকে রপ্ত করতে গিয়ে নিজের মাতৃভাষার সঙ্গে বৈমাত্রীয় আচরণ করলে চলবে না। আমরা যখন বাঙালি তখন এটা মেনে নেওয়া যায় না। বিশ্বের আঞ্চলিক ভাষাভাষী জাতি হিসেবে আমরা সপ্তম অবস্থানে আছি। তবুও দিনের পর দিন বাংলাভাষা চর্চার ক্ষেত্রে সংকট দেখা দিচ্ছে। বিশেষ করে দেশের ইংরেজি মিডিয়ামে পড়া এবং প্রবাসী বাংলা ভাষাভাষী সন্তানদের ক্ষেত্রে সংকটের মাত্রা প্রবল।

২০১৯ সালে কানাডার বাংলা স্কুল টরেন্টো’র উদ্যোগে ‘প্রবাসে বাংলা শেখার প্রয়োজনীয়তা ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেমিনারে বক্তারা বলেন, সবাইকে বুঝতে হবে যে বাঙালির অভিবাসী সন্তানরা যদি বাংলা না শেখে তবে বাংলা পত্রিকা, বাংলা টিভির অস্তিত্ব একদিন বিলীন হয়ে যাবে। ভবিষ্যতে ভাষা শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক দেওয়ার মানুষের অভাব দেখা দিতে পারে।

কানাডায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের বাংলাভাষা শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। পরিবার থেকে বাংলা শেখার চাহিদা সৃষ্টি করতে হবে। বাংলা শিক্ষার জন্য অভিভাবকদের পারিবারিক চর্চা ও যোগাযোগ বাড়াতে হবে। অভিভাবকদের বুঝতে হবে কোনটা প্রয়োজন আর কোনটাতে উপকার। বাসায় নিজেরা বাংলায় কথা বলতে হবে। সন্তানদের সঙ্গে বাংলায় কথা বলার চর্চা থাকলে বাচ্চারা বাংলা ভুলে যাবে না। এক্ষেত্রে মায়েরা বেশি ভূমিকা রাখতে পারে।

সন্তানদের পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে। সন্তানরা যেন বাংলাভাষা ব্যবহার করে সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। শিশুকাল থেকেই তাদের বাংলায় কথা বলতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। সন্তানদের নিজের শিকড় সম্পর্কে জানানোর এবং গুরুত্ব অনুধাবন করানোর দায়িত্ব অভিভাবকদের। ছেলেমেয়েদের কাছে বাংলাদেশের গল্প বলতে হবে। বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস জানাতে হবে। টরেন্টোর সেমিনারে বাংলা স্কুল আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা বলেন, তারা বাংলাভাষা কানাডার বিভিন্ন সেক্টরে অন্তর্ভুক্তি করার জন্য কাজ করবেন। তাদের এ সুন্দর উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।

প্রবাসে আমাদের নতুন প্রজন্মের বাংলা বলা নিয়ে শঙ্কা আছে। আমাদের বর্তমান প্রজন্মের সন্তানরা টেনেটুনে বাংলা বলে। হয়তো তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গল্পের ছলে বলবে, আমাদের পূর্বপুরুষ একসময় বাংলায় কথা বলত। এ ধরনের শঙ্কার কথা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বাঙালিরা কোনো অনুষ্ঠানে একত্রিত হলে উপস্থিত ছোট শিশুরা নিজেদের মধ্যে বাংলায় কথা বলে না। তারা যে যেই দেশে বাস করে সেই দেশের প্রচলিত ভাষায় নিজেদের মধ্যে কথা বলে। আবার একই বাঙালি পরিবারে সন্তানরা নিজেদের মধ্যে বিদেশি ভাষায় কথা বলে।

এমন দৃশ্য দেখে অবাক লাগে, মন খারাপ হয় কিন্তু ধীরে ধীরে আমরা ব্যাপারটি মেনে নিচ্ছি বা মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছি। যদি কানাডার কথা বলি তাহলে বলতে হয়, এখানকার স্কুলে স্থানীয় শিশুদের ইংরেজি ও ফ্রেঞ্চ ভাষা শেখানো হয়। স্কুলের সহপাঠীরা নিজেদের মধ্যে ভাব বিনিময়ে এই ভাষাগুলোই ব্যবহার করে। কিন্তু স্কুলের গণ্ডির বাইরে বাংলা ভাষাভাষী পরিবারের মধ্যে শিশুরা বাংলার পরিবর্তে ভিন্ন ভাষা বলবে কেন?

বাঙালি পরিবারের সন্তানরা নিজেদের মধ্যে কথা বলার সময়ও বাংলা ভাষার বাইরে বিদেশি ভাষা ব্যবহার করে। এটা কি সচেতন অভিভাবকের জন্য মেনে নেওয়ার মতো বিষয়? আর এর ফলে এ জেনারেশনের শিশুরা বড় হয়ে স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে যখন কলেজে ওঠে তখন তাদের মধ্যে অনেকেই বাংলা শুদ্ধ করে বলতে ও লিখতে পারে না। অথচ ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, কানাডায় বসবাস করা বেশির ভাগ পরিবারই সন্তান বড় হওয়ার সঙ্গে সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে উৎকণ্ঠায় ভোগেন। চিন্তা করেন, সন্তান না আবার বিদেশি কালচার পেয়ে বসে! কিন্তু সন্তান ছোট থাকা অবস্থায় তাদের সচেতন থাকা জরুরি। সন্তানের মুখে নিজের মাতৃভাষার পরিবর্তে অন্য ভাষা বলার অভ্যাসটাকে দূর করানো উচিত। চেষ্টা করা দরকার, অন্তত নিজেদের কথাবার্তায় বাংলাভাষা ব্যবহারের অভ্যাস করানো।

একটা জাতির আত্মপরিচয়ের বহিঃপ্রকাশ হয় তার ভাষায়। ভাষা শহীদদের রক্তে ভেজা বর্ণমালার আবেগ কোমলমতি শিশুদের মধ্যে সৃষ্টি করে দেওয়াটা আমাদের দায়িত্ব। আমাদের বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের পর ৭০ বছর পার হয়ে গেছে। কিন্তু আমাদের মাতৃভাষাকে খোদ স্বভূমিতে আইন করেও এখনো সর্বস্তরে পৌঁছে দিতে আমরা পারিনি। প্রবাসে দেখি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত মাতৃভাষার বাইরে অন্য ভাষা ব্যবহার করায় নিষেধাজ্ঞা আছে। ক্ষেত্র বিশেষে অন্য ভাষা ব্যবহার করতে হলে বিশেষ অনুমতি লাগে। আমাদের বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশের দিকেই লক্ষ করা যাক। কয়েক বছর আগে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকার আইন করে রাজ্যের সব বিলবোর্ডে বাংলা লেখা বাধ্যতামূলক করেছে। যদিও আশির দশকে বাংলাদেশ সরকারও এই আইন করেছিল কিন্তু আমরা তা ধরে রাখতে পারিনি।

প্রতিবেশী দেশ নেপালে ২০১২ সালে তাদের সরকার ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম বিদেশি ভাষা পরিবর্তন করে স্থানীয় ভাষায় রাখার আদেশ জারি করে এবং দুই মাসের মধ্যে নাম পরিবর্তন না করলে ওইসব প্রতিষ্ঠানের অধিভুক্তি বাতিল করে শাস্তি প্রদানের কথা বলা হয়েছে। অথচ বাংলাদেশে শতাধিক বিশ^বিদ্যালয়ের কয়েকগুলো বাদে সবই ইংরেজি নামে চলছে। সরকার সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন করতে চাইলে মন্ত্রণালয় বা মঞ্জুরি কমিশন প্রস্তাব করতে পারে ইংরেজি নাম পরিবর্তন করে বাংলায় নামকরণ করার জন্য। মুক্তবাজার অর্থনীতি তথা বিশ্ব বাজারের দ্রুত সম্প্রসারণের নামে আমরা দেশে উৎপাদিত পণ্যের গায়েও বাংলার পরিবর্তে ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করতে দেখি। ‘আমের স্বাদ’ না লিখে লেখা হয় ‘ম্যাঙ্গো ফ্লেভার’, ‘খাবার পানি’ না লিখে বোতলের গায়ে লেখা হয় ‘ড্রিংকিং ওয়াটার’। পণ্যের মুদ্রণ বাংলায় হলেও ভাষা ইংরেজি। এটা কতটা অনুচিত তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

ইংরেজ, জার্মান, ফরাসিরা তাদের ভাষাকে অন্য ভাষাভাষীর মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে রাষ্ট্রীয়ভাবে কোটি কোটি টাকা খরচ করে চলছে। কিন্তু সে তুলনায় প্রবাসে বাংলা ভাষার চর্চার জন্য সরকারি কোনো সহযোগিতা নেই। আর বিদেশিদের বাংলাভাষা চর্চার জন্য উৎসাহ প্রদানে কিংবা বাংলা ভাষার আধিপত্য বা বিস্তৃতির ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের কোনো আন্তর্জাতিক নীতিমালাও নেই। তবুও ভাষা বহে চলা নদীর মতো। বাংলাদেশের মানুষ পৃথিবীর যে প্রান্তেই গিয়েছে মুখে তার নিজের মাতৃভাষাটাকে সঙ্গী করে নিয়েছে। সেখানে সে মাতৃভাষাকে প্রকাশের চেষ্টা করেছে। বর্তমান পৃথিবীতে প্রায় ২৮ কোটি বা তারও বেশি মানুষের ভাষা বাংলা। এর মধ্যে বাংলাদেশে ১৬ কোটি, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা, বিহার ও ওড়িশাসহ আছে প্রায় ১২ কোটি বাংলা ভাষাভাষী। আর পৃথিবীময় ছড়িয়ে আছে দেড় কোটিরও বেশি মানুষ। এ দেড় কোটি মানুষ প্রবাসে আমাদের বাংলা ভাষার প্রতিনিধিত্ব করে। বাংলা ভাষাকে ছড়িয়ে দেয় বিশ্বময়। বাংলাভাষা চর্চার ক্ষেত্রে বহির্বিশ্বে স্বাধীনতার পূর্বে ইংল্যান্ড, জাপান, আমেরিকা এবং পরে আশির দশক পর্যন্ত তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছিল। সেখান থেকে বাংলা ভাষার সেরা সব ক্লাসিক গ্রন্থ প্রকাশিত হতো। ছাপানো হতো শিশু, নারীসহ নানা বিষয়ভিত্তিক আকর্ষণীয় পত্রিকা। এ সব প্রকাশনা কাজে বিভিন্ন সময় জড়িত ছিলেন ননী ভৌমিক, হায়াত মামুদ, প্রফুল্ল রায়সহ অনেক খ্যাতিমান ব্যক্তি। পৃথিবীতে এ বিপুল সংখ্যক বাংলাভাষী মানুষের সংখ্যা বিবেচনায় রেখেই বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকা, রেডিও তেহরানসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো তাদের নিজেদের দেশ থেকে বাংলা ভাষায় বিভিন্ন অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে যাচ্ছে।

প্রবাসে বাংলা ভাষাকে টিকিয়ে রাখতে অনেক উদ্যোগ নিয়েছে প্রবাসীরা এবং বাংলাদেশি কমিউনিটিসহ বাংলা ভাষাকেন্দ্রিক বিভিন্ন গণমাধ্যম ও প্রতিষ্ঠান। কানাডা, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপজুড়ে যেখানে বাংলাদেশি কমিউনিটি আছে সেখানেই প্রবাসীরা নিজেদের উদ্যোগে বাংলা স্কুল তৈরি করে স্বল্প পরিসরে হলেও নিজেদের সন্তানদের বাংলা শিক্ষা দেওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ প্রচেষ্টার পেছনে মূল কারণ, সন্তানের ভেতর নিজের দেশের ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতিফলন ঘটানো। প্রবাসে বিশেষ করে ইউরোপ, কানাডা, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য, জাপানসহ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিনিয়ত বাংলাচর্চার জন্য বিভিন্ন সুযোগ প্রবাসীরা সৃষ্টি করছে। প্রবাস থেকে প্রায় ৫০ থেকে ৬০টি অনলাইন ও প্রিন্ট সংস্করণে বাংলা ভাষায় পত্রিকা ম্যাগাজিন বের করছে। বর্তমানে ইউরোপে প্রায় সাত থেকে আটটি বাংলা টিভি চ্যানেল বাংলা খবরসহ বিনোদন অনুষ্ঠান প্রচার করছে। ইংল্যান্ডের ইস্ট লন্ডন ও বার্মিংহামসহ দেশজুড়ে চার লাখেরও বেশি বাংলা ভাষাভাষী মানুষের বাস। সেখানকার সরকারি স্কুলগুলোতে বাংলা শেখার ও চর্চার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া কমিউনিটির উদ্যোগে ব্যক্তিগত অনুদানের মাধ্যমেও বাংলা স্কুল তৈরি করে শিশুদের জন্য বাংলাভাষা ও সংস্কৃতিচর্চার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। এ রকম প্রায় শ’ খানেক বিদ্যালয় আছে যেখানে বাংলা শেখানো হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্ব থেকেই ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের প্রাচ্যবিদ্যা ও ভাষাচর্চা বিভাগের অধীনে বাংলা ভাষার চর্চা ও গবেষণা চলছে। এ কাজে বাংলা ভাষাভাষীদের পাশাপাশি কাজ করছেন টিডব্লিও ক্লার্ক, জেডি এন্ডারসন, জনবোল্টন, উইলিয়াম রাদিচে, হ্যানা থমসন প্রমুখ। ইংল্যান্ডের পর বাংলাভাষা চর্চা ও গবেষণার জন্য অন্যতম হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।

সেখানে প্রায় ১০টি বিশ^বিদ্যালয় ও এশিয়া গবেষণা কেন্দ্রে বাংলাভাষা চর্চা হয়। ভাষাচর্চা ছাড়াও গবেষণা হয় বাংলা ভাষার লেখক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাশ ও লালন ফকিরকে নিয়ে। কানাডায় জোসেফ ও কনেল, ব্যারি মরিসনসহ (ভ্যাংকুভার) বেশকিছু প্রবাসী ব্যক্তি বাংলায় অধ্যাপনা ও গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মাতৃভাষা শেখানোর জন্য অস্ট্রেলিয়াতে প্রায় ২০টি স্কুল পরিচালনা করছে বাংলাদেশিরা। গবেষণার ক্ষেত্রে মানিয়ন মাডার্নসহ শিবনারায়ণ রায়, আবু সয়ীদ আইয়ুব গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এশিয়ার মধ্যে জাপান, কোরিয়া, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে বাংলা ভাষার চর্চা আছে। জাপানে প্রায় ৬০ বছর আগে কাজুয়ো আজুমা রবীন্দ্রনাথকে ভালোবেসে বাংলা চর্চা শুরু করেছিল। চীনে রেডিও বেইজিং বাংলা সম্প্রচার করে। চীন থেকে প্রকাশিত হয়েছে বেশ কিছু বাংলা অনুবাদকর্মও। মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত প্রায় এক কোটি বাঙালি বাংলায় কথা বলে বাংলা ভাষার আধিপত্য ধরে রেখেছে।

বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে বাংলাদেশের যেহেতু অর্থনৈতিক আধিপত্য এখনো সৃষ্টি হয়নি, সেহেতু বিদেশি নাগরিক তো দূরের কথা, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতরাও বাংলাভাষা চর্চায় উৎসাহী হয় না। যদিও ইউরোপে, আমেরিকায় নিয়ম হচ্ছে, মাধ্যমিক স্কুল উত্তীর্ণ হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় একটি ভাষা শেখার সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু বাংলা ভাষাকে সেই দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চালু করার উদ্যোগ বাংলাদেশ সরকারকেই নিতে হবে। প্রবাসে যে এত বৃহৎ সংখ্যক বাংলা ভাষাভাষী ছড়িয়ে আছে সেটা বাইরের পৃথিবীকে বোঝাতে হবে। পৃথিবীতে এমন অনেক প্রধান ভাষা আছে যেসব ভাষায় কথা বলা মানুষের সংখ্যা এক কোটিরও কম। সেই তুলনায় বাংলা ভাষাভাষীদের মূল ভূখণ্ড বাদ দিয়ে শুধু বহির্বিশ্বেই বাংলায় কথা বলা মানুষের সংখ্যা প্রায় দুই কোটি। নতুন বিশ্বায়নের এ যুগে দুই কোটি বাংলা ভাষাভাষীর হাত ধরেই পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ তার ভাষার ও অর্থনৈতিক আধিপত্য বিস্তার করতে পারে। এর জন্য উদ্যোগ নিতে হবে বাংলাদেশ সরকারকে। উদ্যোগ হিসেবে দরকার বাংলাভাষার বিস্তারে আন্তর্জাতিক নীতিমালা প্রণয়ন ও সহযোগিতা। দুই কোটি প্রবাসী আমাদের মাতৃভাষা, সংস্কৃতি ও দেশের অর্থনীতিকে পৃথিবীময় ছড়িয়ে দিতে উন্মুখ হয়ে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবাইকে সঠিক উচ্চারণে বাংলাচর্চার আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘বাঙালি হয়েও যারা বিদেশি উচ্চারণে বাংলা বলেন তাদের জন্য করুণা হয়। যারা মাতৃভাষা ছেড়ে শিশুদের ইংরেজি শেখান, তারা মানসিক দীনতায় ভোগেন। আমাদের দুর্ভাগ্য হলো, বারবার আমাদের ওপর আঘাত এসেছে। ভাষার মাধ্যমে বারবার বাঙালির ওপর আঘাত হেনেছে পাকিস্তানি শাসকরা। শুধু ভাষা নয়, আমাদের সংস্কৃতি, কৃষ্টি, জাতিসত্তার ওপরে আঘাত করা হয়েছে। মূলত আমাদের অস্তিত্বের ওপরই আঘাত এসেছিল। মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা করতে হবে। বিশ্বায়নের যুগে অন্য ভাষা শেখার গুরুত্ব রয়েছে। তবে, অবশ্যই মাতৃভাষাকে বাদ দিয়ে নয়। মাতৃভাষার অপমান সহ্য করা যায় না। মাতৃভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আমাদের যে অগ্রযাত্রা সেখান থেকেই আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা পাওয়ায় বাংলা ভাষার প্রতি দেশের জনগণের দায়িত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে।’

দেশে কিংবা প্রবাসে আমরা বাঙালিরা যে যেখানে অবস্থান করছি, আমাদের প্রচেষ্টায় বিশ্বের সর্বত্র লাল-সবুজের আলো ছড়িয়ে পড়ুক। তাহলেই আমরা গৌরবের ইতিহাসের প্রতিফলন বিশ্বের দরবারে সার্থকভাবে উপস্থাপন করতে সক্ষম হব। প্রতিজন বাঙালির হৃদয়ে বেঁচে থাকুক দেশপ্রেম। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বাঙালির প্রিয় মাতৃভাষার বাংলার চর্চা সাবলীলভাবে অব্যাহত থাকুক।

শাহীন চৌধুরী ডলি : কলাম লেখক

গ/আ

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
© স্বত্ব © ২০২3  গনরাজ24
Support : ESAITBD Software Lab Dhaka