তথ্যপ্রযুক্তির যুগে বাংলা ভাষাকে বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে দিতে হবে। ইন্টারনেট ও ইউটিউবে যখন দেখি সুদূর সিওরা লিয়নের মানুষও ভালোবাসে বাংলাভাষা। তাদের দাফতরিক ভাষা হিসেবে বেছে নিয়েছে আমাদের বাংলা ভাষা। জাতীয় সঙ্গীতটাকেও তারা পরম মমতায় গাইভাবনায় একুশে ফেব্রুয়ারি তথ্যপ্রযুক্তির যুগে বাংলা ভাষাকে বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে দিতে হবে।
ইন্টারনেট ও ইউটিউবে যখন দেখি সুদূর সিওরা লিয়নের মানুষও ভালোবাসে বাংলাভাষা। তাদের দাফতরিক ভাষা হিসেবে বেছে নিয়েছে আমাদের বাংলা ভাষা। জাতীয় সঙ্গীতটাকেও তারা পরম মমতায় গাইছেন। তাহলে আমরা কেন বাংলাভাষা থেকে দূরে সরে যাব! শুধু ফেব্রুয়ারি মাসেই কেন বাংলার চর্চা হবে। বাংলাভাষার চর্চা বছরজুড়ে হবে না কেন! উনিশ শ’ বায়ান্ন থেকে দু’হাজার বাইশ সাল। পেরিয়ে গেছে ভাষা আন্দোলনের সত্তর বছর। তরুণ প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা একুশ নিয়ে কী ভাবছেন, কীভাবে লালন করছেন তারা? একুশে ফেব্রুয়ারির দিন ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সবাই মিলে স্কুল থেকে দল বেঁধে ভোরবেলা শহীদ মিনারে প্রভাতফেরিতে যাওয়া, মাতৃভাষা দিবস উদযাপনে শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা ও সেই ছবিটি নিজ ফেসবুক টাইমলাইনে শেয়ার করেই কি একুশে শেষ!
বাংলাদেশের ইতিহাসে ফেব্রুয়ারি মাস অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানের মানুষ নিরীহ বাঙালির প্রতি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এমনকি সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও আঘাত শুরু করে। বাংলাভাষা ও সাহিত্যের ঐতিহ্য নস্যাৎ করার অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়। যার প্রেক্ষাপটে শুরু হয় ভাষা আন্দোলন। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিবর্ষণে প্রাণ দিয়েছিল সালাম, বরকত, রফিকসহ নাম না জানা এদেশের তরুণ ছাত্রসমাজ ও জনতা। তাদের বুকের তাজা রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল ঢাকার রাজপথ। প্রাণের ভাষা বাংলার অস্তিত্ব ও অন্যতম রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়ার দাবিতে তুমুল আন্দোলনে যেতে বাধ্য হয় বাঙালি। এ আত্মত্যাগে দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ল বিদ্রোহের আগুন। পরবর্তীকালে নানা ঘাত-প্রতিঘাত, আন্দোলন সংগ্রামের পর বাংলাভাষা পায় পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা। আজ একুশে ফেব্রুয়ারি পৃথিবীতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পেয়েছে স্বীকৃতি। বাঙালি জাতির কাছে বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে প্রেরণার মাস ফেব্রুয়ারি।
প্রাণের ভাষাকে তরুণ প্রজন্ম আজও ভালোবাসে, অনুভব করে মন থেকে। যে কোনো জাতির সাহিত্য ও সংস্কৃতির মাধ্যম ভাষা। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের বাহনও ভাষা। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন নজির নেই, ভাষার জন্য এত মানুষ জীবন দিয়েছে। এত রক্তের বিনিময়ে পাওয়া বাংলা ভাষার ব্যবহার ও চর্চা সম্পর্কে এখনো তরুণ প্রজন্ম সচেতন নয়। দিন দিন ইংরেজি ভাষায় কথা বলার চর্চা বাড়ছে। অনেকে ইংরেজি ভাষায় কথা বলাকে স্মার্টনেস মনে করেন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির ইতিহাস আমাদের অহংকার। একুশের মধ্যে যে বাঙালি জাতির চেতনা ও আবেগ আছে, তা প্রচণ্ড শক্তি হিসেবে এখনো রয়েছে। আমাদের অস্থি-মজ্জা, ভাষা, সংস্কৃতি ও ইতিহাসে যে চেতনা গাঢ় হয়ে মিশে আছে, তাকে ধ্বংস করা অত সহজ নয়। ভাষা আন্দোলনের মূল দাবি ছিল সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন ঘটানো। কিন্তু আজও সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন হয়নি। এখনো উচ্চশিক্ষা, অফিস-আদালতে ইংরেজির প্রাধান্য বিদ্যমান। আদিবাসীরা আজও তাদের মাতৃভাষায় পড়ালেখার অধিকার থেকে বঞ্চিত। শুধু মূল্যবোধের অভাবে বাংলাভাষা তার নিজস্বতা হারাচ্ছে।
আশিকুর রহমান টুটুল : শিক্ষার্থী (মাস্টার্স)
সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী কলেজ
গ/আ