আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনী তৎপরতা জোরদার করেছে।
অন্যান্য রাজনৈতিক দল এখনো প্রার্থী মনোনয়ন ও অভ্যন্তরীণ সমন্বয়ের দ্বিধায় থাকলেও জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী মাওলানা কামরুল আহসান এমরুল আগেভাগেই মাঠে নেমে প্রচারণা শুরু করেছেন।
শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) জুমার নামাজের পর শম্ভুগঞ্জ পশ্চিম বাজার জামে মসজিদ থেকে শুরু হয় তাদের গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি। প্রার্থীর নেতৃত্বে নেতা-কর্মীরা বাজারের বিভিন্ন অলিগলি, দোকানপাট, চায়ের স্টল ও পথচারীদের মাঝে দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে ভোট চেয়ে লিফলেট বিতরণ করেন।
দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ও সৎ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার:
গণসংযোগকালে জামায়াত প্রার্থী মাওলানা কামরুল আহসান এমরুল বলেন, “আমরা দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনের লক্ষ্যে কাজ করছি। সমাজে সৎ ও যোগ্য নের্তৃত্ব প্রতিষ্ঠাই আমাদের লক্ষ্য। দাঁড়িপাল্লা ন্যায় ও ভারসাম্যের প্রতীক— আমরা সেই ন্যায়বিচার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চাই।”
তিনি জনগণের প্রতি আহ্বান জানান, “সৎ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে দাঁড়িপাল্লায় একটি মূল্যবান ভোট দিন।”
আগাম প্রচারণায় নতুন কৌশল:
জামায়াতে ইসলামী এবার নির্বাচনী প্রচারণায় ‘দরজায় দরজায় গণসংযোগের নতুন’ কৌশল গ্রহণ করেছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি ইউনিয়ন, ওয়ার্ড ও বাজারভিত্তিক গণসংযোগ কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করে তরুণ ভোটারদের কাছে দলের বার্তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
জামায়াতের স্থানীয় এক রুকন মো: মফিদুল ইসলাম জানান, “আমাদের হয়তো বড় দলের মতো অর্থ বা প্রচারযন্ত্র নেই, কিন্তু আমাদের আছে সংগঠন, কর্মীশক্তি ও জনগণের আস্থা। আমরা জনগণের ঘরে ঘরে যাচ্ছি, তাদের কথা শুনছি।”
ভোটারদের মাঝে ইতিবাচক সাড়া:
শম্ভুগঞ্জ পশ্চিম বাজারে শুক্রবারের গণসংযোগে দেখা গেছে, স্থানীয় জনগণ জামায়াতের এই উদ্যোগে বেশ আগ্রহ দেখিয়েছে। অনেকে লিফলেট হাতে নিয়ে পড়েছেন, প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলেছেন এবং এলাকার সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন। নেতা-কর্মীরাও জনগণের প্রত্যাশা ও অভিযোগগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনছেন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার জন্য।
আকাশ মিয়া নামেে এক ব্যবসায়ী বলেন, “আমরা উন্নয়ন চাই, কিন্তু তার চেয়ে বড় কথা সৎ নেতৃত্ব চাই। যদি সৎ মানুষ রাজনীতি করে, দেশ ভালো থাকবে।”
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জামায়াতের অবস্থান:
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও অন্যান্য দল এখনো প্রার্থী নির্ধারণ ও জোট সমন্বয়ে ব্যস্ত। ঠিক এই সময়েই জামায়াতে ইসলামী মাঠে নেমে ভোটারদের মনোযোগ আকর্ষণে এগিয়ে গেছে।
সারোয়ার নামে স্থানীয় এক রাজনৈতিক বোধ্যা বলেন , “জামায়াত এবার কৌশলগতভাবে আগেভাগে মাঠে নেমে প্রাথমিক রাজনৈতিক সুবিধা নিচ্ছে। এই তৎপরতা নির্বাচনে তাদের অবস্থানকে আরও দৃঢ় করতে পারে।”
নতুন বার্তা ও প্রচারণার ধরন:
জামায়াতের বার্তা খুব স্পষ্ট— “দাঁড়িপাল্লায় ভোট দিন, দুর্নীতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়বিচারের শাসন প্রতিষ্ঠা করুন।” দলের তরুণ প্রজন্ম সামাজিক মাধ্যমে ভিডিও ও সংক্ষিপ্ত প্রচারণা বার্তা প্রচার করছে। প্রচারণায় ‘সৎ নেতৃত্ব, ন্যায়ভিত্তিক সমাজ’— এই স্লোগানকে সামনে রাখা হয়েছে।
নেতা-কর্মীদের উচ্ছ্বাস ও জনসম্পৃক্ততা:
প্রচারণায় কোন কোন স্থানে নারী, যুব ও ছাত্র সংগঠনের নেতারাও অংশ নিচ্ছেন। স্থানীয় পর্যায়ে ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার টানানো হচ্ছে। এক তরুণ সমর্থক বলেন, “দাঁড়িপাল্লা মানে ন্যায়বিচার, মানে ভারসাম্য। আমরা সৎ মানুষের রাজনীতি ফিরিয়ে আনতে চাই।”
জামায়াতে ইসলামী এবার সংগঠিত, পরিকল্পিত ও জনমুখী কৌশল নিয়ে নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। যেখানে বড় রাজনৈতিক দলগুলো এখনো প্রস্তুতি নিচ্ছে, সেখানে জামায়াতের আগাম প্রচারণা স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন গতি এনেছে। ভোটারদের মধ্যে এই প্রচারণা কতটা প্রভাব ফেলবে তা এখনই বলা না গেলেও, স্থানীয়ভাবে জামায়াতের উপস্থিতি ও কার্যক্রমে নির্বাচনী উত্তাপ ক্রমশ বাড়ছে।