Logo
রবিবার, ০৩ অগাস্ট ২০২৫, ০৩:৪২ অপরাহ্ন
বিজ্ঞপ্তি :
অনলাইন নিউজ পোর্টাল গনরাজ24- ইতিমধ্যে পাঠক সমাজে ব্যাপকভাবে সমাদৃত, বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে প্রতিষ্ঠানটিতে কাজ করছে তরুণ, অভিজ্ঞ ও নির্ভিক সংবাদকর্মীরা।  এই তালিকায় আপনাকেও যোগ হবার সুযোগ দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি । শিক্ষাগত যোগ্যতা: কমপক্ষে স্নাতক/সমমান। অভিজ্ঞদের শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিলযোগ্য । অভিজ্ঞতাঃ গণমাধ্যমে নূন্যতম ১/২ বছরের কাজের বাস্তব অভিজ্ঞতা থাকতে হবে । মোবাইল- 01784-262101, ই-মেইল- gonoraj24@gmail.com
শিরোনাম :
ময়মনসিংহের চর ঈশ্বরদীয়া ইউনিয়ন পরিষদে টিসিবি‘র পণ্য বিতরণে অনিয়ম পুলিশ প্রশাসনের নিস্ক্রিয়তায় দুর্ধর্ষ চোরি,ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটছে খালেদা জিয়ার সুস্থ্যতা ও তারেক রহমানের দীর্ঘায়ু কামনায় দোয়া ও ইফতার মাহফিল নবগঠিত শম্ভুগঞ্জ প্রেসক্লাবের আয়োজনে দোয়া ও ইফতার মাহফিল শম্ভুগঞ্জ ঔষধ ব্যবসায়ী সমিতির আয়োজনে দোয়া ও ইফতার মাহফিল গৌরীপুর মহিলা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষা সফর ৪১ সদস্য বিশিষ্টি চর নিলক্ষীয়া ইউনিয়ন কৃষক দলের আহ্বায়ক কমিটি গঠন ফুলপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগীতা, সাংস্কৃতিক ও পুরুষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে শম্ভুগঞ্জ প্রেসক্লাবের পুষ্পস্তবক অর্পণ ঐতিহ্যবাহী গৌরীপুর মহিলা কলেজে নবাগত অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের যোগদান

বায়ু দূষণের শীর্ষে বাংলাদেশ

ড. আনোয়ার খসরু পারভেজ
  • আপডেটের তারিখ : বৃহস্পতিবার, ৩১ মার্চ, ২০২২
  • সময় 3 years আগে
  • ২৪৫ বার পড়া হয়েছে
বাযু দূষণে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে ঢাকা। ছবি: সংগৃহীত।

বায়ু দূষণ বর্তমান বিশ্বে বৃহত্তম পরিবেশগত স্বাস্থ্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত। সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘আইকিউএয়ার’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ীবাংলাদেশ ২০১৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর দেশের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে।

২০২১ সালের বায়ুমান সূচক অনুযায়ীবাংলাদেশে বাতাসের প্রতি ঘনমিটারে মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর সূক্ষ্ম বস্তুকণা পিএম ২.৫-এর মাত্রা ৭৬.৯। এর মাত্রা ১০–এর নিচে হলে তা ক্ষতিকর নয় বলে বিবেচনা করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছেবাংলাদেশে ৬৪টি জেলার মধ্যে ৫৪টি জেলারই বায়ুর মান আদর্শ মাত্রার চেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে।

বায়ুমান সূচক ২০২০ অনুযায়ী,  শীর্ষ দূষিত ১০০ শহরের মধ্যে বাংলাদেশের মানিকগঞ্জঢাকাঢাকার আজিমপুর ও গাজীপুরের শ্রীপুরের অবস্থান যথাক্রমে ১৬২৩৬০ ও ৬১ নম্বরে।

ঢাকার চারপাশের ইটভাটায় নিম্নমানের কয়লা পোড়ানো এবং ঢাকা নগরীর গ্যাসবিদ্যুৎপানিড্রেনেজ এবং রাস্তাঘাট উন্নয়নমেরামত ও সংস্কার কার্যক্রমের আওতায় অপরিকল্পিতভাবে রাস্তা-ঘাট খোঁড়াখুঁড়িরাস্তার পাশে আবর্জনার স্তূপমেরামতহীন ভাঙাচোরা রাস্তায় যানবাহন চলাচলফিটনেসবিহীন যানবাহন থেকে অতি মাত্রায় বিষাক্ত কালো ধোঁয়ার নির্গমনভবন নির্মাণ ও ভাঙার সময় মাটিবালুইটসহ অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রী বাইরে রাস্তা-ফুটপাতে যত্রতত্র ফেলে রাখামেশিনে ইট-পাথর ভাঙা এবং শিল্প-কারখানার বিষাক্ত কালো ধোঁয়া ও ধুলাবালি বায়ু দূষণের অন্যতম প্রধান উৎস। এসব উৎস থেকে বিপুল পরিমাণ বিষাক্ত ক্ষতিকারক গ্যাসভারীধাতব কণা ও ধুলাবালি বাতাসে মিশে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।

সাম্প্রতিক কালের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে২.৫ মাইক্রোমিটার আকৃতির ভাসমান বস্তুকণা যথাক্রমে—ফার্মগেটদারুস সালামসংসদ ভবননারায়ণগঞ্জরাজশাহী ও চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে ৮৪.৫৩৮০.৪৪৬৩.৯০৯৪.০৫৬১.৬৭ ও ৭৮.৭৮। যার সহনীয় পরিমাণ হচ্ছে, ৫০ মাইক্রোগ্রাম প্রতি ঘনফুট। উপরন্তু ঢাকার বাতাসে ক্যাডমিয়াম প্রায় ২০০ গুণ বেশিনিকেল ও সিসার মাত্রা প্রায় দ্বিগুণ ও ক্রোমিয়াম প্রায় ৩ গুণের বেশি।

বায়ুমান সূচক ২০২০ অনুযায়ী,  শীর্ষ দূষিত ১০০ শহরের মধ্যে বাংলাদেশের মানিকগঞ্জ, ঢাকা, ঢাকার আজিমপুর ও গাজীপুরের শ্রীপুরের অবস্থান যথাক্রমে ১৬, ২৩, ৬০ ও ৬১ নম্বরে।

এক সমীক্ষায় দেখা গেছেঢাকা শহরের বায়ু দূষণের জন্য ইটভাটা দায়ী ৫৮%ডাস্ট ও সয়েল ডাস্ট ১৮%যানবাহন ১০%বায়োমাস পোড়ানো ৮% এবং অন্যান্য উৎস ৬% দায়ী। একজন সুস্থ স্বাভাবিক লোক গড়ে ২,০০,০০০ লিটার বায়ু শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করে থাকে। দূষিত বায়ুর কারণে ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়এ থেকে ক্যান্সার হতে পারেযা মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।

বায়ু দূষণের কারণে বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর প্রায় ৭০ লাখ মানুষ মারা যায়। ২০২১ সালে পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রায় ৪০ হাজার মৃত্যুর সরাসরি কারণ বায়ু দূষণ। সম্প্রতি সিওপিডি (ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ) নামক রোগটি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।

এ রোগটি বাংলাদেশে মৃত্যুর তৃতীয় কারণ। এ রোগের সঙ্গে বায়ু দূষণ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বায়ু দূষণে ঢাকাবাসীর আয়ু কমেছে সাড়ে ৭ বছর। অতিরিক্ত বায়ু দূষণের খারাপ প্রভাব পড়ছে মানুষের প্রজনন স্বাস্থ্যের ওপর।

মানুষের কর্মকাণ্ডের জন্যই জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটে বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে—এটি এখন এক কঠিন সত্য। শিল্প-কারখানায় ব্যবহৃত জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ হয়ে বাতাসে মিশছেবায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বায়ুমণ্ডলে প্রধান গ্রিনহাউজ গ্যাস কার্বন ডাই-অক্সাইডমিথেন ও নাইট্রাস অক্সাইডের বার্ষিক গড় দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৪১০ পিপিএম (পার্টস পার মিলিয়ন)১৮৬৬ পিপিবি (পার্টস পার বিলিয়ন) ও ৩৩২ পিপিবি।

গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, বিগত এক দশকে (২০১১-২০) ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ১৮৫০-১৯০০-এর চেয়ে ১.০৯ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বৃদ্ধি পেয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মানুষের কর্মকাণ্ডই পৃথিবীর জলস্থল ও বায়ুমণ্ডলকে আশঙ্কাজনকভাবে উত্তপ্ত করে তুলছে।

আবার প্রযুক্তি পণ্যের উচ্ছিষ্ট বর্জ্যগুলো মাটিবায়ু ও পানিকে দূষিত করছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সামগ্রিক অভিঘাত বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করছে। মানবসৃষ্ট কর্মকাণ্ডের জন্য ভূপৃষ্ঠের অবনয়ন ঘটছেযার নেতিবাচক অভিঘাত পৃথিবীকে ঠেলে দিয়েছে জীববৈচিত্র্যের মহাবিলুপ্তির দিকে।

বর্তমান সরকার এই উন্নয়নের ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছে। বাংলাদেশ ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিভিএফ) ও ভালনারেবল টোয়েন্টি (ভি২০) গ্রুপের চেয়ার হিসেবে বর্তমানে কাজ করছে।

জলবায়ু পরিবর্তন সমস্যা মোকাবিলা ও সবুজ উন্নয়নের মাধ্যমে সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য ‘মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্ল্যান’ তৈরি করা হয়েছে। কপ-২৬-এর অভীষ্ট অর্জনে সিভিএফ ও ভি ২০-এর প্রধান হিসেবে বাংলাদেশের এই কর্মকাণ্ড প্রশংসার দাবি রাখে। কয়লা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হওয়ায় কয়লা ভিত্তিক কয়েকটি প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে।

একজন সুস্থ স্বাভাবিক লোক গড়ে ২,০০,০০০ লিটার বায়ু শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করে থাকে। দূষিত বায়ুর কারণে ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এ থেকে ক্যান্সার হতে পারে, যা মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।

বায়ু দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাঁচার জন্য নির্মল ‘বায়ু আইন ২০১৯’ এর প্রয়োগসবুজ আন্দোলনসহ নিম্নোক্ত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করা জরুরি।

• ত্রুটিপূর্ণ ও কালো ধোঁয়া উৎপাদন করে এমন যানবাহন ব্যবহার বন্ধ করা।

• ইটের ভাটা লোকালয় থেকে দূরে স্থাপন করা। পুরনো পদ্ধতির ইটভাটাগুলোকে জ্বালানি সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব ইটভাটায় রূপান্তর করা।

• কম জ্বালানি ব্যবহার হয় এমন উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা।

• ধূমপান না করা।

• উন্নত চুলা ব্যবহার করা।

• বনভূমি সংরক্ষণ করা ও নতুন বনভূমি সৃষ্টি করা।

• সাধারণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষের বায়ু দূষণের পরিমাণ বাইরের বায়ু দূষণের চেয়ে প্রায় ১০ গুণ বেশি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১০০ গুণ বেশি হয়ে থাকে। এসি ব্যবহারে সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।

• সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহের অভ্যন্তরীণ বায়ু দূষণ বহিরঙ্গের বায়ু দূষণের চেয়ে অধিকমাত্রায় বেশি। তাই বায়ুমান নিশ্চিত করা জরুরি।

• বায়ু দূষণের কারণে রোগাক্রান্তদের সুচিকিৎসার জন্য সরকারের নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

• সবুজ করের প্রস্তাব গ্রহণ করা যেতে পারে। এর মূল নীতি হবে ‘যারা কলুষিত করবে বা দূষণ করবেতারা বেশি কর প্রদান করবে।’

• অতিমাত্রায় দূষিত বায়ুর শহরগুলোতে ‘স্মগ টাওয়ার’ স্থাপন করা যেতে পারে।

• নগরবাসীর স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ নিশ্চিত করতে অচিরেই বায়ু দূষণের উৎসসমূহ বন্ধ করতে হবে। বায়ু দূষণের সকল উৎস বন্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।

এ অবস্থায় পরিবেশের প্রতি আমাদের সংবেদনশীল হতে হবে এবং পরিবেশের প্রতি যত্নশীল থেকে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালাতে হবে।

উন্নয়ন সংক্রান্ত সকল নীতিমালায় পরিবেশের বিষয় গুরুত্ব দিতে হবে এবং পরিবেশ নিয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। পাশাপাশি টেকসই উন্নয়নের বৈশ্বিক লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখেই আমাদের পরিকল্পনা ও উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। বায়ু দূষণের মাত্রা কমিয়ে আনার জন্য সরকারপরিবেশ অধিদপ্তরসংশ্লিষ্ট সংস্থা ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সমন্বিত কার্যক্রম পরিচালনা আবশ্যক।

ড. আনোয়ার খসরু পারভেজ, গবেষক ও অধ্যাপকমাইক্রোবায়োলজি বিভাগজাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

 

আ/গ

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
© স্বত্ব © ২০২3  গনরাজ24
Support : ESAITBD Software Lab Dhaka