Logo
রবিবার, ০৩ অগাস্ট ২০২৫, ০৩:৪৪ অপরাহ্ন
বিজ্ঞপ্তি :
অনলাইন নিউজ পোর্টাল গনরাজ24- ইতিমধ্যে পাঠক সমাজে ব্যাপকভাবে সমাদৃত, বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে প্রতিষ্ঠানটিতে কাজ করছে তরুণ, অভিজ্ঞ ও নির্ভিক সংবাদকর্মীরা।  এই তালিকায় আপনাকেও যোগ হবার সুযোগ দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি । শিক্ষাগত যোগ্যতা: কমপক্ষে স্নাতক/সমমান। অভিজ্ঞদের শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিলযোগ্য । অভিজ্ঞতাঃ গণমাধ্যমে নূন্যতম ১/২ বছরের কাজের বাস্তব অভিজ্ঞতা থাকতে হবে । মোবাইল- 01784-262101, ই-মেইল- gonoraj24@gmail.com
শিরোনাম :
ময়মনসিংহের চর ঈশ্বরদীয়া ইউনিয়ন পরিষদে টিসিবি‘র পণ্য বিতরণে অনিয়ম পুলিশ প্রশাসনের নিস্ক্রিয়তায় দুর্ধর্ষ চোরি,ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটছে খালেদা জিয়ার সুস্থ্যতা ও তারেক রহমানের দীর্ঘায়ু কামনায় দোয়া ও ইফতার মাহফিল নবগঠিত শম্ভুগঞ্জ প্রেসক্লাবের আয়োজনে দোয়া ও ইফতার মাহফিল শম্ভুগঞ্জ ঔষধ ব্যবসায়ী সমিতির আয়োজনে দোয়া ও ইফতার মাহফিল গৌরীপুর মহিলা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষা সফর ৪১ সদস্য বিশিষ্টি চর নিলক্ষীয়া ইউনিয়ন কৃষক দলের আহ্বায়ক কমিটি গঠন ফুলপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগীতা, সাংস্কৃতিক ও পুরুষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে শম্ভুগঞ্জ প্রেসক্লাবের পুষ্পস্তবক অর্পণ ঐতিহ্যবাহী গৌরীপুর মহিলা কলেজে নবাগত অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের যোগদান

আপনি আদর করে আপনার সন্তানের মুখে ‘ফাস্ট ফুড’ নামে আসলে বিষ কিনে দিচ্ছেন

প্রভাষ আমিন
  • আপডেটের তারিখ : বুধবার, ২৩ মার্চ, ২০২২
  • সময় 3 years আগে
  • ২৫১ বার পড়া হয়েছে

গত সপ্তাহে ধানমন্ডির রাপা প্লাজার ওপরে ‘জয়িতা’ রেস্টুরেন্ট এবং বিক্রয়কেন্দ্রে গিয়েছিলাম। ভর্তা-ভাজি, ছোট মাছ দিয়ে তৃপ্তি করে দুপুরের খাবার খেয়েছি। খাবার শেষ করেছি রসগোল্লা দিয়ে। অল্প টাকায় চমৎকার পরিবেশে খাওয়া এবং কেনাকাটার এরচেয়ে ভালো জায়গা ঢাকায় খুব একটা নেই। খোলামেলা স্পেসে খাওয়া এবং আড্ডা দেওয়ার দারুণ সুযোগ আছে এখানে।

সরকারের জয়িতা ফাউন্ডেশনের অধীনে নারী উদ্যোক্তোরাই এটি পরিচালনা করে। খাওয়া শেষে ঘুরতে ঘুরতে অনেককিছুই দেখলাম। আমার স্ত্রী মুক্তি কিছু কেনাকাটাও করল। আমি আড়াইশ গ্রাম খই কিনেছিলাম। মুড়ি তবু খাওয়া হয়, কিন্তু খই কত দিন খাই না। খই দেখেই নস্টালজিক হয়ে গেলাম।

বাসায় গিয়ে আমাদের ছেলে প্রসূনকে খুব আগ্রহ নিয়ে খই খেতে দিলাম। সে খুব অনিচ্ছায় আমার মন রাখতে এক মুঠ খেলো। আর আমি টানা চারদিন মনের আনন্দে নাস্তা করলাম খেজুরের গুড় আর খই দিয়ে। আহা সেই ছেলেবেলার স্বাদ। এর আগে একদিন প্রসূনের স্কুলের সামনে তালের শাস দেখে নিজে খেলাম, প্রসূনকেও খাওয়ালাম। খেয়ে ও বলল, বাবা এটার স্বাদ কী? না মিষ্টি, না টক, না ঝাল।

এখন আমি তাকে কীভাবে বোঝায় তাল শাসের স্বাদ কেমন। ছেলেবেলায় আমরাও অখাদ্য কম খাইনি। স্কুলের সামনের ধুলো ধূসরিত আচার, মুড়ি মাখা, চানাচুর, চিটমিঠাই, আইসক্রিমের নামে মিষ্টি বরফের টুকরা, লজেন্স, টফি, শনপাপড়ি কত বাহারি খাবার। এর অধিকাংশই নগদ টাকায় কিনতে হতো না। হাড়ি-পাতিল, ভাঙা বোয়মসহ নানান পুরনো জিনিসপত্রের বিনিময়ে এসব পাওয়া যেত।
চৈত্রের দুপুরে যখন ‘আ…ই…স…ক্রি…ম’ বলে লম্বা ডাক আর আইসক্রিমের বক্সের বাড়ি দেওয়ার আওয়াজ আমাদের চিত্ত নাড়িয়ে দিত। আমরা ব্যাকুল হয়ে যেতাম। অনেকসময় ভালো বোয়াম ভেঙে ফেলতাম আইসক্রিমের লোভে।

দিন বদলে গেছে। এখন প্রসূনদের প্রিয় খাবার চিকেন ফ্রাই, চিকেন বল, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, বার্গার, পিৎজা, চিপস, নুডলস, কোমল পানীয়। ‘ফাস্ট ফুড’ নামে পরিচিত এইসব খাবার খেয়ে যারা বেড়ে উঠছে, তাদের আমরা ফার্মের মুরগি বলে ব্যঙ্গ করি। কিন্তু দোষটা কি পুরোপুরি তাদের দেওয়া ঠিক হবে?

শিশুরা তো আর জন্মের সাথে সাথে ফাস্ট ফুডের জন্য ভালোবাসা নিয়ে আসেনি। নিজেদের ব্যস্ততা আড়াল করতে আমরা সন্তানের মুখে ফাস্ট ফুড তুলে দেই। ছেলেবেলায় অনেক অখাদ্যের পাশাপাশি আমরা অনেক পুষ্টিকর খাবারও খেতাম। আর যা খেতাম, তা ছিল একেবারে টাটকা।

ছেলেবেলায় বছরে-ছয়মাসে একবার কাঁচের বোতলে কোকাকোলা খাওয়ার সুযোগ মিলতো। সেই কাঁচের বোতলের জন্য আবার বাড়তি টাকা জমা রাখতে হতো। বোতল ফেরত দিলে টাকা ফেরত পেতাম। তবে কোকাকোলা না খেলেও শীতের সকালে খেজুরের রস আর অন্যসময় গাছের ডাবের পানিই আমাদের তৃষ্ণা মেটাতো।

‘ফাস্ট ফুড’ নামে পরিচিত এইসব খাবার খেয়ে যারা বেড়ে উঠছে, তাদের আমরা ফার্মের মুরগি বলে ব্যঙ্গ করি। কিন্তু দোষটা কি পুরোপুরি তাদের দেওয়া ঠিক হবে?

তখনকার আর এখনকার মধ্যে পার্থক্য হলো, আমরা যা খেতাম, তা টাটকা আর আমার সন্তান খাচ্ছে প্রক্রিয়াজাত খাবার। আম, জাম, কাঁঠাল, কলা, খেজুর, নারকেল, তাল; যা খেতাম সব নিজের গাছের। পুকুরের মাছ, পোষা মুরগির ডিম, ঘরের পাশে লাগানো সবজি- সব টাটকা। হঠাৎ কোনো অতিথি এলে মা বলতেন, একটা মুরগি ধর। তারপর দৌড়ঝাঁপ করে মুরগি ধরা হতো।

সকাল সকাল জগ নিয়ে গরু আছে এমন প্রতিবেশীর বাড়ি চলে যেতাম। সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে দোয়ানো দুধ নিয়ে আসতাম। হিমায়িত, পাস্তুরিত শব্দগুলো আমরা বইয়ে পড়েছি। আর আমার সন্তান হিমায়িত, পাস্তুরিত খেয়েই বেড়ে উঠছে।

আফসোস করে কোনো লাভ নেই। সেই সময় আর ফিরে পাবো না। পাস্তুরিত, হিমায়িত, প্রক্রিয়াজাত খাবারের ওপর নির্ভর করেই বেড়ে উঠবে আমাদের প্রজন্ম। কিন্তু তারা যা খাচ্ছে, তা মানসম্পন্ন তো? এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়েই আমরা শঙ্কিত হই। এই যে এখন মানুষ নানান রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়, তার পেছনে অন্যতম কারণ খাবার। বেঁচে থাকার জন্য আমরা খাই। কিন্তু এই খাবারই আমাদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। আগে দশ গ্রামে একজন ক্যান্সার রোগীর দেখা মিলতো। এখন ঘরে ঘরে ক্যান্সার রোগীর বাস।

বাংলাদেশ অনেক পাল্টে গেছে। মাথাপিছু আয় তিন হাজার ডলারের দিকে যাত্রা করছে। মধ্যম আয়ের দেশ বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে। এখন আর শুধু বেঁচে থাকার জন্য খাওয়া নয়, খাওয়ার পুষ্টিমান, গুণমানও বিবেচনায় আনতে হয়। কিন্তু জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে আমরা আবার পুষ্টিমানের কথা বাদ দিয়ে ন্যূনতম চাহিদার দিকে উল্টো যাত্রা শুরু করেছি। তবে দামের সাথে যদি মানটাও বাড়তো, তাহলে কষ্টটা একটু কম হতো। এখন আমাদের যদি উচ্চমূল্য ভেজাল খাবার, অস্বাস্থ্যকর খাবার, মানহীন খাবার কিনে খেতে হয়; তাহলে মানুষ যাবে কোথায়?

সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে তিনটি গবেষণা হয়েছে। গবেষণায় বাজারে চাহিদা বেশি এমন ৯টি প্যাকেটজাত খাদ্যপণ্য, ৫টি ব্র্যান্ডের ফ্রায়েড চিকেন ও ফ্রেঞ্চ ফ্রাই এবং ১০টি ভিন্ন কোম্পানির কোমল পানীয় এবং ৫টি কোম্পানির এনার্জি ড্রিংক বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

বিবেচনায় নেওয়া পণ্যের মধ্যে ছিল চিপস, চানাচুর, বিস্কুট, মটর ভাজা, ডাল ভাজা, দুধের চকলেট, আইসক্রিম, ললিপপ, চাটনি, ফ্রাইড চিকেন, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, কোমল পানীয় এবং এনার্জি ড্রিংক। ভয়ঙ্কর তথ্য হলো, গবেষকরা এসব খাদ্যপণ্যে স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর সব উপাদান পেয়েছেন। তার মানে আপনি আদর করে আপনার সন্তানের মুখে আসলে বিষ কিনে দিচ্ছেন।

ভয়ঙ্কর তথ্য হলো, গবেষকরা এসব খাদ্যপণ্যে স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর সব উপাদান পেয়েছেন। তার মানে আপনি আদর করে আপনার সন্তানের মুখে আসলে বিষ কিনে দিচ্ছেন।

চিকেন ফ্রাই খেলেই যে আপনার সন্তান মারা যাবে, তা নয়। তাই আপনি বিপদটা টের পাচ্ছেন না। এই বিষাক্ত, ভেজাল প্রক্রিয়াজাত খাবার আপনার সন্তানকে দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলবে।

গবেষকরা এসব খাবারে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ক্যালরি, লবণ, চিনি, স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড ও ট্রান্স ফ্যাটি অ্যাসিডের সঠিক পরিমাণ পাননি। কোনো কোনো খাবারে বিপজ্জনক মাত্রায় আর্সেনিক, সিসা, সোডিয়াম, ট্রান্সফ্যাট পাওয়া গেছে। কোমল পানীয় ও এনার্জি ড্রিংকেও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর উপাদান মিলেছে।

বিএসএমএমইউ এবং হার্ট ফাউন্ডেশনের যৌথ গবেষণার ফল দেখে বা এই লেখা পড়ে আপনারা ফাস্ট ফুড, জাঙ্ক ফুড, হিমায়িত, পাস্তুরিত, প্যাকেটজাত খাবার কেনা বন্ধ করে দেবেন না নিশ্চয়ই। ফাস্ট ফুড এখন বাস্তবতা। গবেষকরাও এটা জানেন। তারা সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

ফাস্ট ফুড আসক্তি বা নির্ভরতা কমাতে হবে। আর কী খাচ্ছেন বা খাওয়াচ্ছেন, সেটা দেখে নিতে হবে। তবে সমস্যা হলো প্যাকেট দেখে তো আর গুণ, মান বোঝার উপায় নেই। ভেতরে খাবারের মান যাই হোক, প্যাকেটটা হবে চকচকে। প্যাকেটের উপাদানও লেখা থাকবে। নিশ্চয়ই বিএসটিআইয়ের অনুমোদনের কথাও লেখা থাকবে। আর গবেষণায় যে পণ্যগুলো নেওয়া হয়েছে সবগুলোই তথাকথিত ভালো কোম্পানির এবং এগুলোই বাজারে সবচেয়ে ভালো চলে। এই সব পণ্যেরই যদি এই অবস্থা হয় তাহলে বাকিগুলোর কী অবস্থা, সেটা ভাবতেই শিউরে উঠতে হয়।

এখানে আসলে সাধারণ মানুষের সচেতন হওয়ারও উপায় নেই। কী দেখে তারা কেনার সিদ্ধান্ত নেবে বা নেবে না। একদম না কেনা যেহেতু সম্ভব নয়, তাই ঝুঁকিটা নিতেই হয়। তাই এখানে পুরোটাই সরকারের দায়িত্ব। কঠোর মান নিয়ন্ত্রণ, নজরদারি আর মান ঠিক না রাখলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই।

ব্যবসায়ীদের প্রতি একটাই আকুল আবেদন করা যেতে পারে। আপনারা ব্যবসা করুন। কিন্তু ব্যবসারও তো ন্যূনতম নৈতিকতা থাকতে হবে। আপনারা পকেট কাটুন, প্লিজ সাথে গলাটা কাটবেন না।

প্রভাষ আমিন- বার্তা প্রধান, এটিএন নিউজ।

 

আ/গ

 

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
© স্বত্ব © ২০২3  গনরাজ24
Support : ESAITBD Software Lab Dhaka