এরমধ্যে রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের একজন জ্যেষ্ঠ কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার ভোরে ইউক্রেইনের সরকারি বাহিনী ও দেশটির পূর্বাঞ্চলভিত্তিক রাশিয়ার সমর্থনপুষ্ট বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে গোলা বিনিময় হয়েছে। এ দুই পক্ষের মধ্যে আট বছর ধরে চলা যুদ্ধে এখন একটি অস্ত্রবিরতি চললেও প্রায়ই এ ধরনের গোলা বিনিময়ের মাধ্যমে তা লঙ্ঘন করা হয়। কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন হওয়ায় পশ্চিমা দেশগুলো বলছে, যে কোনো সময় অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটতে পারে।
স্নায়ুযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কে এবার সবচেয়ে গভীর সংকট তৈরি হয়েছে যার মঞ্চ ইউরোপ। রাশিয়া নিরাপত্তা বিষয়ক বেশ কিছু নিশ্চয়তা চাইছে যার মধ্যে ইউক্রেইন কখনো নেটো সামরিক জোটে যোগ দিবে না, এ দাবি অন্যতম। অন্যদিকে নেটোর নেতৃত্বে থাকা যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র দেশগুলো রাশিয়াকে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ও আস্থা নির্মাণের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে।
পশ্চিমা দেশগুলো হিস্টিরিয়াগ্রস্থের মতো আচরণ করছে, এমন অভিযোগ করে রাশিয়া জানিয়েছে, ইউক্রেইন সীমান্তের কাছে মহড়া শেষে তাদের সেনারা ঘাঁটিতে ফিরে যাচ্ছে আর তাদের আগ্রাসন চালানোর কোনো পরিকল্পনা নেই। কিন্তু অনেক পশ্চিমা দেশই রাশিয়ার এ বক্তব্যকে আমলে নিতে নারাজ; ইউক্রেইন সম্ভাব্য হামলা চালানোর আগে মস্কো সীমান্তে সেনা সমাবেশ বৃদ্ধি করে চলছে বলে অভিযোগ তাদের। হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে বাইডেন বলেছেন, “তারা এগিয়ে যাওয়ার অজুহাত তৈরির জন্য মিথ্যা হামলার ভান করায় ব্যস্ত, আমাদের এমন বিশ্বাস করার কারণ আছে। আমাদের কাছে থাকা প্রত্যেকটি ইঙ্গিতে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে, তারা ইউক্রেইনে প্রবেশের ও হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।”
তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনকে শেষ মুহূর্তে তার ভ্রমণ পরিকল্পনাপ পরিবর্তন করে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেন। বৃহস্পতিবারের ওই বৈঠকে রাশিয়ার সম্ভাব্য পরিকল্পনার রূপরেখা তুলে ধরেন ব্লিনকেন।
তিনি বলেন, “এটি রাশিয়ার ভেতরে বানোয়াট তথাকথিত সন্ত্রাসী বোমা হামলা হতে পারে, গণকবর আবিষ্কারের উদ্ভাবিত কাহিনী হতে পারে, বেসামরিকদের বিরুদ্ধে সাজানো ড্রোন হামলা হতে পারে অথবা রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করে একটি ভুয়া বা সত্যিকারের হামলা হতে পারে। রাশিয়া এসব ঘটনাকে জাতিগত নির্মূল বা গণহত্যার ঘটনা বলে বর্ণনা করতে পারে।”
এর প্রতিক্রিয়া রাশিয়ার সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্জেই ভেরশেইনিন বলেছেন, ব্লিনকেনের মন্তব্য আপত্তিকর ও বিপজ্জনক।
ইউক্রেইনের সংকট নিয়ে শুক্রবারও কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। এদিন কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, পোল্যান্ড, রোমানিয়া, ব্রিটেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও নেটোর নেতাদের সঙ্গে একটি অনলাইন বৈঠক করবেন বাইডেন।
অপরদিকে ব্লিনকেন জার্মানিতে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে অন্যান্য পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। আসছে সপ্তাহে তার রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সঙ্গেও বৈঠক করার কথা রয়েছে।
কিন্তু এরমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে চাপে ফেলে রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক মিশনের সহকারী প্রধান বার্ট গোরমানকে বহিষ্কার করেছে। মস্কো বৃহস্পতিবার এ পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করলেও মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গোরমান গত সপ্তাহেই রাশিয়া ছেড়ে গেছেন।