ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহর খেকে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার দূরে সিমান্ত উপজেলা হালুয়াঘাটের গাবরাখালি গারো পাহাড় পর্যটন কেন্দ্রটি সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র এবং ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য নতুন এক আকর্ষণ ।
কাজের ফাঁকে কিংবা কাজের একগুয়েমিতা দূর করতে যাঁরা লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে দেশ-বিদেশের নানা প্রান্তে ছুটে বেড়ান প্রকৃকির টানে একটু বিনোদনের জন্য তাঁদের জন্য গাবরাখালি গারো পাহাড় পর্যটন কেন্দ্রটি একটি নতুন দোয়ার। হালুয়াঘাট উপজেলা শহর থেকে এর দূরত্ব ১৪.৫ কিলোমিটার। বিভাগীয় শহর ময়মনসিংহ পর্যটন কেন্দ্রটির দূরত্ব ৬৫ কিলোমিটা হলেও এই রাস্তাটির বিভিন্ন স্থানে সংস্কার কাজ ও নির্মাণাধীন বিভিন্ন ব্রিজের কাজের জন্য বাসে চড়ে দুই ঘন্টার মতো সময় লেগে যায় স্থানটিতে পৌঁছাতে। ভাড়া লাগে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা।
তবে হালুয়াঘাট উপজেলা শহর থেকে মোটর সাইকেল,অটোরিকশাসহ নানা যানে চড়ে যাওয়া যায়।এতে ভাড়া লাগবে ৪০ খেতে ৫০ টাকা। কেন্দ্রে প্রবেশ মূল্য জন প্রতি ২০ টাকা।ব্যাক্তিগত কোন যান নিয়ে গেলে পার্কিং এর সু-ব্যবস্থা আছে। তবে এর জন্য আপনাকে গুণতে হবে নির্ধারিত পার্কিং মূল্য।ভ্রমণ পিপাসু মানুষ যারা প্রকৃতির নৈসর্গ লীলাভূমি খাগড়াছড়ি বান্দরবান ভ্রমন করে প্রকৃতির নির্মল পরশ পেতে চান তারা কিছু সময়ের জন্য ঘুরে আসতে পারেন ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী উপজেলা হালুয়াঘাটের গাবরাখালী গারো পাহাড় পর্যটন কেন্দ্র থেকে।
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সীমানা ঘেষা এই পর্যটন কেন্দ্রটিতে গেলে আপনি সবুজ প্রকৃতির ছোঁয়ায় একধরনের নির্মল আনন্দ উপভোগ করবেন। স্থানটিতে যওয়ার পথেই আপনার চোখে পড়বে মেঘালয় রাজ্যের সুবিশাল দৃষ্টিনন্দন তুরা পাহাড়। আরো দূর সীমানায় তাকালে হিমালয় পাহাড়ের প্রতিচ্ছবি আপনার দৃষ্টির সীমানায় ভেসে উঠবে। সেখানে যেতে না পারলেও বাংলাদেশের হালুয়াঘাটে ছোট ছোট গারো পাহাড় গুলো আপনাকে ঠিকই কাছে টানবে। ঘুরে বেড়াতে পারবেন এ পহাড় থেকে ও পাহাড়ে। এ সময় আপনার সাথে দেখা হবে বিভিন্ন বয়সের অনেক দর্শনার্থীর সাথে। তাদের অনেকেই পরিবারের সদস্যদের নিয়েই সেখানে ঘুরতে এসেছে।
শিক্ষা সফরেও আসেন এ অঞ্চলের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকবৃন্দ।কথা হয় এমন একটি শিক্ষা সফরে আসা শিক্ষার্থী ও শিক্ষকবৃন্দের সাখে। তাঁরা এসেছেন পার্শ্ববর্তি উপজেলা ফুলপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজ থেকে। শিক্ষার্থীদের কয়েক জনের সাথে কথা হয়, তারা জানান-এখানে এসে বেশ আনন্দিত তারা, সিরি বেয়ে পাহাড়ে চড়ছেন এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে নানা বৃক্ষরাজির ফাঁক দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন,বিশ্রামাগারে বিশ্রাম নিচ্ছেন,ঝুলন্ত সেতুতে চড়ছেন।তাঁরা এখানে আসতে পেরে দারুণ খুশি।
কথা হয় ফুলপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক হাবিবুর রহমানের সাথে তিনি জানান-প্রায়ই আসি এখানে,পাহাড় ঘেরা প্রকৃতি দেখতে খুব ভালো লাগে,তাই এবার ছাত্রীদেরকে নিয়ে এসেছি শিক্ষা সফরে।
ফুলপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজের অপর এক জন শিক্ষক সাফায়াত জামিল সাজু বলেন-পাহাড় ঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের অনন্য স্থান এটি, সময় পেলেই এখানে আসি, এবার কলেজের শিক্ষার্থীদেরকে নিয়ে এসেছি। তারা পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য দেখে মুগ্ধ।
ফুলপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রওশন আরা বেগম বলেন-শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সফরের জন্য ভালো একটি স্থান নির্বাচন জরুরি। শিক্ষার অংশ শিক্ষা সফর। মেয়েরা এখানে এসে ঘুরে ঘুরে দেখছে,তাঁরা খুব উৎফুল্ল।তাঁদের আনন্দ দেখে আমারও খুব ভালো লাগছে। যদিও স্পটটির উন্নয়ন ও সৌন্দর্য্য বর্ধনের কাজ এখনো চলছে।
জানা যায় গাবরাখালী গ্রাম গুলোতে একসময় হাজং ও বানাই জনগোষ্ঠী বসবাস করতো । ১২৫ একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত ছোট-বড় ১৬৭টি পাহাড়ি-টিলা রয়েছে এ পর্যটন কেন্দ্রে। আপনার কাছে এগুলোকে ছোট ছোট পাহাড়ই মনে হবে । ময়মনসিংহের সাবেক জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রথম গাবরাখালীতে পর্যটন কেন্দ্র করার উদ্যোগ নেন। সেই উদ্যোগই এখন সম্ভাবনাময় একটি পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
আমাদের কথা হয় স্থানীয় এক বয়োজেষ্ঠ্য ব্যাক্তির সাথে তিনি জানান-ঈদ,পূজা,গারো সমাজের উৎসব ও নববর্ষের দিনে হাজারো দর্শনার্থীর ভীড় হয় এই পর্যটন কেন্দ্রটিতে। এ ছাড়াও প্রতিদিন শত শত মানুষের আনাগোনা তো আছেই। তবে এখনো সংযোগ সড়ক গুলোতে হয়নি কাঙ্ক্ষিত সংস্কার। জানা যায় সরকারিভাবে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নির্মিত পর্যটন কেন্দ্রের উন্নয়নে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে হালুয়াঘাট উপজেলা পরিষদ থেকে ১ কোটি টাকার ওপরে বরাদ্দ দিয়েছে। সেই বরাদ্দ থেকেই পর্যটন কেন্দ্রটির প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে ।
পর্যটন কেন্দ্রের উন্নয়নে উপজেলা ও জেলা প্রশাসনও নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে, পর্যটন কেন্দ্রকে আকর্ষণীয় করে তুলতে প্রবেশ মুখেই রয়েছে সুউচ্চ পাহাড় থেকে নেমে আসা স্বচ্ছ জলের মনোরম ঝর্ণাধারা। পাহাড়ের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া লেকে ঝুলন্ত ব্রিজ, লেকে ঘুরতে দর্শণার্থীদের জন্য প্যাডেল বোটের ব্যবস্থাও রয়েছে। পর্যটকদের থাকার জন্য রয়েছে মনোরম রেস্ট হাউস। এ ছাড়া বিশ্রামের জন্য গারো ভাষায় জারামবং (পূর্ণিমা) ও ফ্রিংতাল (শুকতারা) নামে দুটি বিশ্রামাগার রয়েছে। রয়েছে একটি শিশু পার্কও।
পর্যটনকেন্দ্রের সৌন্দর্য বাড়াতে উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পাহাড়ে রোপণ করা হয়েছে কাজুবাদাম, আগর (সুগন্ধি), চা, কফি গাছ। গাবরাখালী গারো পাহাড় পর্যটন কেন্দ্রের কাঙ্খিত উন্নয়ন সাধিত হলে দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছেন ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা।
আ/গ